দিনে কৃষিপণ্য মাড়াই, রাতে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য টাঙ্গাইলের হেমনগর রেলস্টেশন (ভিডিও)
দিনের বেলায় কৃষিপণ্য মাড়াই আর রাতের বেলায় মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু জামালপুর রেললাইনের টাঙ্গাইলের হেমনগর রেলস্টেশন। পাঁচ বছর ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল সংকটের কারণেই স্টেশনটি বন্ধ রয়েছে।
২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু জামালপুর রেললাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ৪২ কিলোমিটার এ রেললাইনে ৫২টি ব্রিজ-কালভার্ট ও ৪টি রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের হেমনগর রেলস্টেশনটি অন্যতম।
পরিত্যক্ত স্টেশনটিতে এখন দিনের বেলায় কৃষিপণ্য মাড়াই আর রাতের বেলায় ভ্রাম্যমাণ পতিতা ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে এটি মাদকসেবিদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। যেন দেখার কেউ নেই। টিকিট না পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রীরা। স্টেশনটি দ্রুত চালু করে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করার দাবী এলাবাসীর।
সরেজমিনে জানা যায়, হাবিবুর রহমান নামে একজন গেটম্যান ছাড়া নেই কোন জনবল। স্টেশনটিতে নেই কোনও যাত্রী ছাউনি। একটি মাত্র টয়লেট থাকলেও নেই পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। উদ্বোধনের আড়াই থেকে তিন বছর স্টেশনটি চালু থাকলেও গেল পাঁচ বছর বন্ধ রয়েছে। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অফিস কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল। দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলছে জানালার কাঁচ।
এদিকে এ রেললাইন দিয়ে চলাচল করা বাহাদুরাবাদ, ধলেশ্বরী, লোকাল ট্রেনসহ গত ২৬ জানুয়ারি যোগ হয়েছে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন। যা প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। কিন্তু জনবলের অভাবে পুরো স্টেশন এখন অরক্ষিত, অভিভাবকহীন। টিকেট মাস্টার না থাকায় যাত্রীরা এখান থেকে কোটায় অথবা স্ট্যান্ডিং টিকেট সংগ্রহ করতে পারছে না। কেউ কেউ ১০ কিলোমিটার দূরে ভূঞাপুর অথবা ১৫ কিলোমিটার দূরের সরিষাবাড়ী স্টেশন থেকে টিকেট সংগ্রহ করেন। কিন্তু জনবল সংকটের অজুহাতে হেমনগর রেলওয়ে স্টেশন পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রাখায় হাজার হাজার যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পাঁচ বছর ধরে স্টেশন বন্ধ ও মাদকের কথা স্বীকার করে স্টেশনের একমাত্র কর্মচারী গেটম্যান হাবিবুর রহমান জানান, এলাকার লোকজনই সব কিছু করে। এতে আমার কিছু করার নেই। চালু থাকলে এমনটি হতো না। দ্রুত স্টেশনটি চালু হওয়া দরকার।
লেখক ও গবেষক মামুন তরফদার জানান, আবাদযোগ্য ভূমি চাষাবাদের অভাবে যেমন পরিত্যক্ত হয়ে যায় এ স্টেশনের অবস্থাও তাই হয়েছে। মাদকসেবী আর ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের আড্ডায় রূপান্তর হয়েছে। স্টেশনটি চালু হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মাদকসেবীদের আঁখরা ধ্বংস হবে। প্রাণ ফিরে পাবে স্টেশনটি। কমবে ভোগান্তি। নিশ্চিত হবে যাত্রী সেবার মান।
টাঙ্গাইল জেলা রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, জনবল সংকটসহ বেশ কিছু ত্রুটির কারণে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় নানান ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। স্টেশনটি চালুর চেষ্টা চলছে। চালু হলে সব সমস্যার সমাধান হবে।
মাদকসেবীদের আখড়ার কথা স্বীকার করে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাসুম আলী খান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত স্টেশনটি চালু করা হবে। যাতে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর হয়। প্রাণ ফিরে পায় স্টেশনটি।
এসএস
মন্তব্য করুন